বাংলাদেশে বায়ু দূষণ: একটি ক্রমবর্ধমান পরিবেশগত সংকট

ঢাকা, বাংলাদেশ।
[ বাহাউদ্দিন ফয়যী ]
বাংলাদেশ, একটি সুন্দর ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর দেশ, বর্তমানে বায়ু দূষণের ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি। রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন শহর ও শিল্পাঞ্চলে বায়ু দূষণের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিভিন্ন পরিবেশ সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের বায়ু দূষণের মাত্রা বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে। এই সমস্যা শুধু পরিবেশের জন্যই নয়, মানুষের স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং সামগ্রিক উন্নয়নের জন্যও একটি বড় হুমকি।
বায়ু দূষণের প্রধান কারণ
বাংলাদেশে বায়ু দূষণের পেছনে বেশ কিছু কারণ দায়ী। ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরগুলোতে যানবাহনের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এসব যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া বায়ু দূষণের একটি বড় কারণ। পুরনো ও অস্বাস্থ্যকর যানবাহন থেকে বেশি পরিমাণে ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত হয়।
বাংলাদেশে শিল্পায়নের প্রক্রিয়া দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু অনেক শিল্পকারখানায় পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার না থাকায় বায়ু দূষণ বাড়ছে। বিশেষ করে ইটভাটা, ট্যানারি এবং কেমিক্যাল কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া ও গ্যাস বায়ু দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
শহরাঞ্চলে ব্যাপক নির্মাণ কাজের ফলে বাতাসে ধুলোবালির পরিমাণ বেড়ে যায়। এই ধুলোবালি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে নানা ধরনের শ্বাসযন্ত্রের রোগ সৃষ্টি করে। তাছাড়া, কৃষিকাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বাতাসে মিশে বায়ু দূষণ ঘটায়। এছাড়া ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট ধোঁয়াও বায়ু দূষণের একটি কারণ। শহর ও গ্রামাঞ্চলে প্লাস্টিক ও অন্যান্য বর্জ্য পোড়ানোর ফলে বিষাক্ত গ্যাস বাতাসে মিশে বায়ু দূষণ বাড়াচ্ছে।
বায়ু দূষণের প্রভাব
বায়ু দূষণের প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক এবং দীর্ঘমেয়াদী। বায়ু দূষণের কারণে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ফুসফুসের ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। শিশু ও বয়স্করা এই দূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বায়ু দূষণের ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা জলবায়ু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করে। এছাড়া অম্ল বৃষ্টির মাধ্যমে মাটি ও পানির দূষণ ঘটে। তদুপরি বায়ু দূষণের কারণে স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এছাড়া দূষণের ফলে কৃষি উৎপাদন হ্রাস পায় এবং শিল্প উৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
বায়ু দূষণ রোধে করণীয়
বায়ু দূষণ রোধে সরকার, বেসরকারি সংস্থা এবং সাধারণ নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। শিল্পকারখানা ও যানবাহনে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। ইটভাটায় উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে দূষণ কমানো সম্ভব।
বায়ু দূষণ রোধে সরকারকে কঠোর নীতি ও আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এর পাশাপাশি জনসাধারণের মধ্যে বায়ু দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে। স্কুল, কলেজ এবং গণমাধ্যমের মাধ্যমে সচেতনতা কর্মসূচি চালানো যেতে পারে।
বেশি করে গাছ লাগানো এবং সবুজ এলাকা সংরক্ষণ করা বায়ু দূষণ কমাতে সাহায্য করবে। গাছ কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন সরবরাহ করে। এছাড়া যানবাহনের ধোঁয়া কমাতে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমের উন্নয়ন ও জনপ্রিয়তা বাড়াতে হবে।
উপসংহার
বায়ু দূষণ বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই সমস্যা সমাধানে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। সরকার, বেসরকারি সংস্থা এবং সাধারণ নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ তৈরি করতে। পরিবেশ রক্ষা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ ও সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।





















Toi Staff
Sabine Sterk
Penny S. Tee
Mark Travers Ph.d
Gilles Touboul
Gideon Levy
John Nosta
Daniel Orenstein
Rachel Marsden